একই পদে দুই গ্রেডের বৈষম্যের অবসান চেয়ে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অডিটররা।
এসময়, উচ্চ আদালতের রায়ের পরও অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ না করে বৈষম্য নিরসনকল্পে ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন অডিট এন্ড একাউন্টস অধিদফতরের অডিটররা।
রবিবার (০৮সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় হিসাব ভবনের সামনে অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত গণ অবস্থান কর্মসূচিতে এসব দাবি জানানো হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান,সিএজির আওতাধীন তিনটি হিসাব সার্কেল ও ১৭টি অডিট অধিদফতরে প্রায় ৬ হাজার অডিটর কর্মরত রয়েছেন। অডিটর পদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট’এর হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত সিভিল রিট পিটিশন থেকে ২০১৬ সালের ২ রা ফেব্রুয়ারি রায় প্রদান করা হয়। রায়ে অডিটর পদটিকে ১০ম গ্রেডে উন্নিত করার কথা বলা হলেও ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর রিট মামলার পক্ষভুক্ত ৬১ জন অডিটরের বেতন গ্রেড ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। বাকি অডিটররা ১১তম গ্রেডে থাকার কারনে বৈষম্যের সৃষ্টি হয় বলে জানানো হয়।
উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে সিএজি কার্যালয় হতে ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর মামলার পক্ষভুক্ত অডিটরসহ “অডিটর পদ” কে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার জন্য সুপারিশসহ অনুরোধ করা হয়। পরদিন ১৩ আগষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয় হতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব বরাবর “অডিটর পদ” কে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে কিনা সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। আইন ও বিচার বিভাগ ২০ তারিখে আইন উপদেষ্টার স্বাক্ষরসহ ‘অডিটর পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা যেতে পারে” মর্মে সুপারিশসহ মতামত প্রদান করে। অতঃপর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আইন ও বিচার বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে পত্র পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারনে প্রায় ৩ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের রায়কে অবমাননা ও আইন উপদেষ্টার মতামতকে উপেক্ষা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ কর্তৃক অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য এককনও পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সিএজি অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে,এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়,আমাদের কিছু করণীয় নেই। ফলে, দীর্ঘদিনের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দূর করার পদক্ষেপ থমকে আছে এবং অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগের অডিটরদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে বলে জানানো হয়।
অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট এর সংস্কার ও বৈষম্য নিরসনে ১১ দফা দাবিগুলো হলো,
অডিটর পদে দুই ধরনের গ্রেডে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য নিরসনের জন্য উচ্চ আদালতের রায় এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের ইতিবাচক মতামতের প্রেক্ষিতে অডিটর পদকে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর হতে ১০ম গ্রেডের সরকারি আদেশ (জিও) জারি করতে হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০০২ সালের জুলাইয়ের ১তারিখ নির্বাহী আদেশের ভিত্তিতে অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট সম্পূর্ণ আলাদাকরণ এবং “অডিট সচিবালয়” ঘোষণা করে একটি কার্যকর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে আইবাস ++ এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট এর কাছে ন্যস্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সময়ে অডিট এন্ড একাউন্টস ক্যাডার পদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধি করা হলেও নন-ক্যাডার পদের বেতন গ্রেড বৃদ্ধি না করে বৈষম্যমূলক অর্গানোগ্রাম তৈরি ও অনুমোদনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বৈষম্যমুক্ত অর্গানোগ্রাম তৈরি করতে হবে।
মেধার ভিত্তিতে “অডিটর” পদে নিয়োগদান সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এর কাছে ন্যস্ত করতে হবে।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য যে সমস্ত অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে সেগুলো তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
বিগত ১৬ বছরের শেখ হাসিনার পরিবারকেন্দ্রিক সকল অনুষ্ঠান পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণে খরচের ভাউচার অডিট এর আওতামুক্ত রাখার নির্দেশনা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক শান্তির আওতায় আনতে হবে।
অবিলম্বে বিভাগীয় পদোন্নতির এসএএস পরীক্ষা পদ্ধতির সংশোধন এবং অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার
পদটিকে এন-ক্যাডারভুক্ত করতে হবে। এনবিআরসহ সকল সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে অডিটের আওতায় আনতে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
“শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালা” ভঙ্গের অজুহাতে চাকুরি হতে নিপীড়নমূলক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরিতে পুনর্বহালসহ নন-ক্যাডার অফিসারদের বিরুদ্ধে গৃহীত অযৌক্তিক হয়রানী, নৈরাজ্য ও শাস্তিমূলক বিভাগীয় মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস (Cost Benefit Analysis) এর ভিত্তিতে মিশন অডিটে অংশগ্রহণকারী ক্যাডারদের রাজস্বের মিতব্যায়িতা নিশ্চিত করে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে অর্থ ব্যায় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডিআই/এসকে