যার যার অবস্থান থেকে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং কাজের মধ্য দিয়েই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো.মাইনুল হাসান।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) শহীদ এসআই শাহজাহান মিলনায়তনে আয়োজিত কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে ডিএমপি কমিশনার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সাথে স্মরণ করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী ও আহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি।
মাইনুল হাসান বলেন,একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। মুষ্ঠিমেয় সদস্যদের অপেশাদার কার্যকলাপের কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়। এটি পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তবে আমরা দিন রাত পরিশ্রমের মাধ্যমে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্ঠা করছি। আমি বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এমন জায়গায় পৌছাতে পারবো যেখানে পুলিশ জনগণের আস্থার প্রতীক হবে।
তিনি আরও বলেন,পুলিশের উপর যে দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে তা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন। পুলিশ হলো রাষ্ট্রের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আমরা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে থাকি। আর স্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সার্বিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত।
আজকের কল্যাণ সভায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ফোর্সের উদ্দেশে যে সকল দিক নির্দেশনা প্রদান করেন সেগুলো ধারণ করে প্রত্যেক সদস্যকে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ বলেন,আমাদেরকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন পরিবারের প্রতিটি সদস্য গর্ব করে বলতে পারে যে আমার পরিবারে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছে। আমরা যে পরিবর্তনের কথা বলছি সেখানে সকলের অংশীদারিত্ব থাকতে হবে।
উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, যে যেই শাখায় কর্মরত আছেন বা যে যেই দায়িত্বে আছেন তাকে সেই শাখার ফোর্সের কল্যাণে কাজ করতে হবে। কাজের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে হবে।
সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো.ইসরাইল হাওলাদার বলেন, আমরা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড পার হয়ে এসেছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে। এই পরিবর্তিত পরিস্থতিতে ডিএমপি কমিশনারের নেতৃত্বে একটি টিম হিসেবে কাজ করে আমাদেরকে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান কল্যাণ সভায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন,আপনারা সবাই অধিকার সচেতন।
নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার পাশাপাশি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগনের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
কল্যাণ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো.শওকত আলী বলেন, আমরা জনগণের প্রতিপক্ষ নই,আমাদেরকে জনগণের জন্যই কাজ করতে হবে। শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিধি-বিধান মেনে করতে হবে।
এছাড়াও লজিস্টিক্স সংক্রান্ত উপস্থাপিত যাবতীয় সমস্যা অচিরেই সমাধান করা হবে মর্মে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
পবিত্র কোরআন থেকে তলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কল্যাণ সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কল্যাণ সভার সভাপতি যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (পিওএম) খন্দকার ফরিদুল ইসলাম।
কল্যাণ সভায় ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যগণ তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যা ও চাহিদার কথা ডিএমপি কমিশনারের মহোদয়ের নিকট পেশ করেন। কমিশনার সকলের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রত্যেকটি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সকলকে আশ্বস্ত করেন। সভা শেষে ডিএমপি কমিশনার ফোর্সের ব্যারাক ও মেস পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
কল্যাণ সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনাররা,যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ,সংশ্লিস্ট উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও পিওএম (উত্তর,দক্ষিণ,পশ্চিম) বিভাগের পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
ডিআই/এসকে