বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোট ৩৭ জন এমপি মন্ত্রী-গ্রেফতার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো.মোতাহের হোসেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বকশিবাজারে অবস্থিত ‘কারা অধিদপ্তরে কারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কিত ব্রিফিংয়ে’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৫ আগস্ট এর পরে যেসব মন্ত্রীরা এবং এমপিরা গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা কারাগারে কোনো ডিভিশন পাচ্ছে কি-না প্রশ্ন করা হলে আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পেয়ে যান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করবেন অথবা এ বিষয়ে আদালত বললে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর যাদের বিষয়ে আদালত বলবেন না তারা যদি আবেদন করেন তখন সে আবেদনটি ডিসির কাছে পাঠাবো, ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা তাদেরকে ডিভিশন দিতে পারব।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে বিশেষ বন্দি (এমপি-মন্ত্রী) মোট ৩৭ জন। তাদের মধ্যে ৯ জন ডিভিশন পাচ্ছেন আর বাকিদের পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কারাগারে হওয়া হামলার ঘটনায় মোট ২৮২ জন কারারক্ষী ও কারাকর্মকর্তা আহত হন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছিলেন তারা বিভিন্ন হাসপাতালে পরবর্তীতে চিকিৎসা নেন। এছাড়া এখনো কিছু কারারক্ষী ও কারাকর্মকর্তা চিকিৎসাধীন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যেসব বন্দিরা সাজাভোগ করেছেন তারা রেয়াত পেতে পেতে মুক্তি পেতে পারেন। যখন তারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন তখন তারা মুক্তি পেতে পারেন। যারা মুক্তির আওতায় চলে আসেন তাদের বিষয়ে প্রস্তাবনা আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঠায়। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেটিংয়ের পর চূড়ান্তভাবে যদি মাফ করতে হয় সেটা রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে মাফ করার অধিকার রাষ্টপতির তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টাও পারেন।
এরকম অনেক বন্দিদের বিষয়ে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয় পাঠানো আছে। এই বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এই বিষয়ে অতি শিগগির একটি বৈঠকের প্রস্তাবনা আছে। যারা অক্ষম চলাফেরা করতে পারেন না অথবা রেয়াত পাওয়ার যোগ্য তাদের মুক্তি দেওয়া হতে পারে।
কারাগারে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গত ১৫ বছরে যে পরিমাণ কাস্টডিয়াল মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স মোতাহের হোসেন বলেন, এটা আসলে আইনের একটা বিষয়। রুটিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি কোনো জায়গায় সন্দেহ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আর কেউ যদি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে তাদেরকে আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।
জুলাই ও আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে যারা গ্রেফতার হয়েছিল তাদের মধ্যে কতজন বন্দি এখনো কারাগারে আছে আর কতজন জামিন পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্দোলন চলার সময় যেই ধরনের মামলা হয়েছিল এবং গ্রেফতার হয়েছিল এ ধরনের বন্দি এখন আমাদের কাছে নেই। সবাই জামিনপ্রাপ্ত হয়ে বের হয়েছেন। আন্দোলনের সময় বন্দি সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার, এখন তা ৫৫ হাজার। তাহলে বলা যায় ওই সময় এসব মামলায় গ্রেফতার প্রায় ১৫ হাজার বন্দি ধীরে ধীরে জামিন পেয়ে বের হয়েছেন।
বিদেশি বন্দিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সাজা ভোগ হওয়ার পরও তাদের অনেকে জেলে থেকে যায়। এখন পর্যন্ত কতজন বিদেশি বন্দি আছে এবং তাদের বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে আইজি প্রিজন্স বলেন, বিদেশি বন্দিদের সাজা শেষ হয়ে গেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পরে আমরা তাদেরকে ডি-পোর্ট করা হয়। এখন কারাগারে মোট ১৪৩ জন বিদেশি বন্দি রয়েছেন। ক্লিয়ারেন্স পেলে তাদেরকে নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
অপরে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারাগারে কোনো বিদ্রোহ ছিল না, বিশৃঙ্খলা ছিল। কিছু দাবি দাওয়া ছিল সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
ডিআই/এসকে