বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালিয়েছে এমন কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। সবশেষ পাবনায় দুই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নাসির এবং এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো মোহম্মাদপুর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি নাইমুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেফতার করেছে বাহিনীটি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুনীম ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে জানিয়েছেন,সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মের ভিডিও দেখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের চিন্হিত করা হচ্ছে এবং তাদের ধরতে র্যাবের ব্যাটেলিয়নগুলো গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে।
র্যাবের চলমান কর্মসূচি প্রসঙ্গে মুনীম ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন,‘সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কারাগার থেকে যেসমস্ত আসামি পলায়ন করেছিল তাদেরকে গ্রেফতার করছি। এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া।
এছাড়া বিভিন্ন থানা এবং অস্ত্রাগার থেকে যে সকল অস্ত্র লুট হয়েছে সেগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি রয়েছে,আমরা অধিকতর গুরুত্ব সহকারে অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি। এই অভিযানে ইতিমধ্যে আমাদের বেশকিছু সাফল্য এসেছে।’
সাম্প্রতিক বন্যায় র্যাবের ভূমিকা উল্লেখ করে মুনীমে ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন,‘বন্যায় র্যাবের দুইটা হেলিকপ্টার বন্যার্তদের জন্য সর্বোক্ষণিকভাবে নিয়োজিত ছিল।
আমাদের রিসোর্স খুবই লিমিটেড ছিল তারপরও আমাদের হেলিকপ্টার দিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর।
তিনি দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন,‘বিশেষ করে বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল, যেখানে বন্যার কোনো রিলিফ পৌঁছেনি সেখানে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি।
বন্যায় সহযোগিতার জন্য আমাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল,সেগুলোতে গুগল লোকেশন শেয়ার করেও অনেকে আমাদের কাছে ত্রাণের জন্য হেল্প চেয়েছিল এবং সেখানে আমরা ত্রাণ দিয়েছি।’
মুনীম ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন, ‘আমরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ উদ্ধারের পাশাপাশি ছয়জন সন্তানসম্ভবা নারীকে উদ্ধার করি, তাদের মধ্যে একজনের ইতোমধ্যে বাচ্চা হয়েছে। এছাড়া একজন বিদেশগামী যাত্রীকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে উদ্ধার করে তার ফ্লাইট ধরিয়ে দিতে সক্ষম হই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে র্যাবের ভূমিকা সম্পর্কে মুনীম ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন,‘র্যাব প্রথম থেকেই অত্যন্ত সজাগ ছিল। র্যাবের কার্যক্রম আপনারা যদি পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে দেখতে পারবেন, আমরা অত্যন্ত সহনশীল ছিলাম।’
তবে র্যাবের র্যাবের হেলিকপ্টার নিয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল উল্লেখ করে মুনীম ফেরদৌস দাবি করেন,‘র্যাব হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থাপনা থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেখানে আটকে পড়েছিলেন,সেখানে আমরা মূলত উদ্ধার তৎপরতা চালাই।’
র্যার হেলিকপ্টার থেকে ছাত্র-জনতার ওপর তাজা গুলি করা হয়নি দাবি করে তিনি দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন,‘উদ্ধার তৎপরতা চালানোর প্রেক্ষাপটে আমরা মূলত টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিন্তু মানুষ মনে করেছে র্যাব তাজা গুলি ছুড়েছে। সাধারণ মানুষ মারণাস্ত্র অর্থাৎ লিথাল এবং নন-লিথাল অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য না বোঝার কারণেই একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই,আমরা মূলত টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করি। এর বাইরে কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।’
তিনি দৈনিক সোনালী খবরকে আরও বলেন,‘আমি দায়িত্ব সহকারে বলতে চাই,সোশাল মিডিয়ায় অনেক ধরনের ছবি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে,আমরা সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছি। সেখানে মারণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাইনি। এ বিষয়ে যদি কারও কাছে কোনো তথ্য উপাত্ত,ভিডিও থাকে সেগুলো আমাদের দেবেন।
সেটি গুরুত্বসহ বিচার বিশ্লেষণ করব এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। কিন্তু সবার কাছে বিনীত অনুরোধ, না বোঝার কারণে বা গুজব ছড়িয়ে র্যাবের হেলিকপ্টারের যে সুনাম সেটা কেউ নষ্ট করবেন না।’
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ব্যাপক রদ-বদল হচ্ছে। এতে করে বাহিনীতে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না জানতে চাইলে মুনীম ফেরদৌস দৈনিক সোনালী খবরকে বলেন, ‘পোস্টিং নিয়মিত বিষয়। আমরা যারা সরকারি চাকরি করি নিয়মিত বিষয় হিসেবেই এটাকে গ্রহণ করি। সরকারি চাকরিজীবীদের যখন যেখানে যেভাবে প্রয়োজন,সরকার তাদেরকে সেভাবে পদায়ন করে। এটা একটি স্বাভাবিক বিষয়।’
ডিআই/এসকে