নিজস্ব প্রতিবেদক ; দুই বছর আগেও লায়লা কানিজ রায়পুরা উপজেলার রাজনীতিতে পরিচিত মুখ ছিলেন না। দলীয় পদ তো দূরের কথা, তিনি সাধারণ একজন কর্মীও ছিলেন না। স্থানীয় লোকজন তাঁকে জানতেন ‘ওয়ান্ডার পার্ক’ নামের একটি বিনোদনকেন্দ্রের মালিক হিসেবে। রাজনীতিতে ঢুকে এক বছরের ব্যবধানে তিনি হয়ে গেলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান, পেয়ে গেলেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ।
ছাগল–কাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ (লাকী) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
রাজনীতিতে লায়লা কানিজের বিস্ময়কর উত্থানের বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজের এলাকায় ‘ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট’ নামের একটি বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। এক দশক ধরে অল্প পরিসরে শুরু হওয়া পার্কটির আয়তন বর্তমানে দেড় একর। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়টাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজীউদ্দিন আহমেদ ওই পার্কে যাতায়াত শুরু করেন। তখনো লায়লা কানিজের দলীয় কোনো পদ নেই, এমনকি তিনি কর্মীও নন।
রাজীউদ্দিন আহমেদ দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য বেছে নিতেন ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টটি। ২০২২ সালের শেষ দিকে তিনি লায়লা কানিজকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন তিনি ছিলেন রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর রায়পুরা উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সাদেক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে পদটি শূন্য ঘোষণা করা হলে কলেজের চাকরি ছেড়ে লায়লা কানিজ হঠাৎ করেই রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন। উপনির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। এর ঠিক আগেই লায়লা কানিজকে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক করা হয়।ছাগল-কাণ্ডের পর থেকে রায়পুরা উপজেলা পরিষদে অনুপস্থিত চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ
ছাগল-কাণ্ডের পর থেকে রায়পুরা উপজেলা পরিষদে অনুপস্থিত চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ
দলীয় কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই উপনির্বাচনে লায়লা কানিজ ছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি শামসুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মনির হোসেন। কিন্তু সংসদ সদস্য রাজীউদ্দিন ও রাজস্ব কর্মকর্তা স্বামী মো. মতিউর রহমানের প্রভাবে দলীয় মনোনয়ন পান লায়লা কানিজ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, স্বামী মতিউর রহমান অবৈধ অর্থ ছড়িয়ে লায়লা কানিজকে দলীয় মনোনয়ন এনে দিয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনিসহ আওয়ামী লীগের কোনো নেতা ওই উপনির্বাচনে অংশ নেননি। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদেরও হুমকি–ধমকি দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কোনো দলীয় পদ না থাকা লায়লা কানিজকে গুরুত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নিজেই এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
ওই উপনির্বাচনের পাঁচ প্রার্থীর একজন সোলাইমান খন্দকারের ভাষ্য, ওই উপনির্বাচনে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ছাড়া কয়েকজনকে দেখানো হয়েছিল বড় অঙ্কের টাকার প্রলোভন। কারা কারা হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁদের নাম বলে নতুন করে বিপদে পড়তে চান না তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি প্রথমে ভয়ভীতিকে পাত্তা দিইনি। কিন্তু যখন ছেলেমেয়েকে হুমকি দেওয়া শুরু করল, তখন বাধ্য হই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলাম।’