বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদকে (২২) হত্যার অভিযোগে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া থানা এলাকা থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন,মেজবাহ উদ্দিন মেজু (৪৪)। তিনি দাগনভূঁইয়া উপজেলার মাতুভূঞাঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ০৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,গত ৪ আগস্ট ফেনী জেলার মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। সেই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র জনতার ওপর প্রকাশ্যে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। গুলিতে নিহত হন মাসুদ। ১৫ আগস্ট এ ঘটনায় নিহতের মা ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-৭ এর কর্মকর্তারা জানান,এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাতে ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া থানার আমিনুল্লাহ মাদরাসা এলাকা থেকে মেজবাহ উদ্দিন গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে ফেনী মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘাতকদের পা ধরেও বাঁচানো যায়নি মাসুদকে :
৪ আগস্ট ফেনীর মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে সরাসরি গুলি চালায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। গুলিতে গুরুতর আহত মাসুদকে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বেকেরবাজার নামক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে তাকে আবার পিটুনি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা। সে সময় তার সহপাঠিরা মাসুদকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ঘাতকদের পা ধরেও রক্ষা পায়নি।
নিহতের ছোট ভাই আল সামির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। আমার ভাই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেই দেশরক্ষার মিছিলে শামিল হয়। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর একজন আমাকে কল দিয়ে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে পড়ে আছে।’
‘পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেকেরবাজারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডাররা আমাদের আটকে আবার পিটুনি দেয়। আমাকে লাথি কিলঘুসি দিলে আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেছি। আমাকেসহ অন্যদের এলোপাতাড়ি মারধর করে তারা। পরে কোনোরকমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন।’
নিহত মাসুদ ফেনীর প্রবাসী মো.শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে এবং ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
ডিআই/এসকে