ডিআইইউ ও সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের যৌথ উদ্যোগে গোল-টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত।
সোমবার ( ৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে একটি গোল-টেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগামীর সমৃদ্ধ, সুন্দর ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংস্কার ও চ্যালেঞ্জিং ইস্যুসমূহ নিয়ে সভায় অংশগ্রহণ করেন বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সঞ্চালনা করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ সেল ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টেট পরিচালক প্রফেসর ডক্টর মো: শরিফুল আলম। তিনি অনুষ্ঠানটিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি তাঁর বক্তব্যে আলোচ্য বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করেন। তিনি সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য শোনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সূচনা বক্তব্যে ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সংবিধানে বিভিন্ন ভাষাভাষিদের সংযুক্ত করা হয়নি। চাকমা, মারমা, সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বীকৃতি পর্যন্ত নেই। ঠিক করতে হবে আমরা সংস্কার করবো নাকি পুনর্লিখন করবো।
ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তার আলোচনায় সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, সংবিধানকে কয়েকদফা সংশোধন করে সংশোধন অযোগ্য করা হয়েছে। আমাদেরকে ঠিক করতে হবে রাষ্ট্রপতি শাসিত নাকি প্রধানমন্ত্রী শাসিত ব্যবস্থা থাকবে। এখন সময় হয়েছে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা নির্ধারনের। যেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব কমানো সম্ভব।
সংবিধানের অসঙ্গতি ও বিচ্যুতি দূর করতে হবে। কমিশনগুলোকে সাংবিধানিক বৈধতা দিতে হবে।
গন অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে বিপ্লবকে ধারণ করে সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব। সংবিধানের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের সংস্কারও প্রয়োজন।
গন সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি তার আলোচনায় বলেন, সংবিধান সংস্কারে জনগণের অভিপ্রায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিলের সংবিধানের সাথে ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষা মিলে যাচ্ছে। সে আলোকে সংশোধন করা যেতে পারে।
ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা, বলেন, বর্তমান সংবিধান জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারে নাই। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ৭০ নং অনুচ্ছেদে আইনসভার স্বাধীনতা বাধা তৈরী করে।
গনফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, জুলাই বিপ্লবকে কেন্দ্র করে সংবিধান রচনা করলে চলবে না। ১৯৭১ সালের চেতনাকে মনে রাখতে হবে। এটি পরিবর্তনশীল। কিন্তু তার সংরক্ষণ করবে সুপ্রীমকোর্ট।
কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ ক্রোয়াক তাকে এমন আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানোয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সংবিধান সংশোধনে লিঙ্গবৈষম্যসহ অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণে আলোকপাতে আহবান জানান।
আলোচনার মাঝে বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন যত দিন মানুষ নিজ ইচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দেবে ততদিন গনতন্ত্র পূর্ণ বিকশিত হবে না।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন সুষ্ঠ গণতন্ত্রের চর্চায় সংবিধান সংস্কার অনস্বীকার্য।
জানিপপের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড: মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ অনুষ্ঠানটির সার্বিক বিশ্লেষণ করেন।
উল্লেখ্য, গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড: নুরুল আমিন বেপারী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল সেক্রেটারি রাজিকুজ্জামান রতন, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড: তানভীর রাজিব, পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্টের চেয়ারম্যান সাবের আহমেদ চৌধুরী, , সাবেক জজ ও কলামিস্ট ইকতেদার আহমেদ ও , ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী, ড. শামীম হামিদি, অধ্যাপক আ: বাসেত, সহযোগী অধ্যাপক তারেক , সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান প্রমুখ । অনুষ্ঠানের আয়োজনের সমন্বয়ক ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিসার্চ সেলের যুগ্ম পরিচালক এবং সহযোগী অধ্যাপক মিলি রহমান।
ডিআই/এসকে