অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড.আফম খালেদ হোসেন বলেছেন, কপালে দাগ,পরণে পান্জাবী, মুখে দাঁড়ি ছুরত নিয়ে এদেশের টাকা লুট করে যারা বিদেশে পাচার করে দেয় তারা দেশ প্রেমিক হতে পারে না। আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। মাদরাসার মুহতামীম মুফতী খলিল আহম্মদ কাশেমীর সভাপতিত্বে ও মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরীর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি আলেম ওলামাদের পরস্পর বিবেদ ও বিচ্ছিন্ন না থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশে ঐতিহাসিক ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান। ধর্ম উপদেষ্টা ডক্টর আ ফ ম খালিদ হুসাইন আরো বলেন, আমরা উপদেষ্টারা চেয়ার দখল করে বসে থাকার জন্য ক্ষমতায় আসেনি। রাষ্ট্র, নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে সংস্কারপূর্বক মেরামত করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসার পর সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে আমরা সরে যাব। এজন্য সকল রাজনৈতিক দল সহ দেশের প্রতিটি মহল সরকারকে সহযোগিতা করা দরকার।
তিনি বলেন দেশে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একটি চক্র ধর্ম নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে; যাতে সত্যের বিন্দুমাত্রও ছিল নাএবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় কোথাও কোথাও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তা ঠিক। তবে ফেসবুকে এটা সেটা না লিখে আপনারা আমাকে চিঠি দিয়ে জানান, পরামর্শ দিবেন। আমার বেশ কয়েকজন সেক্রেটারী আছেন প্রয়োজনে তাদেরকে জানান। হেফাজত প্রসঙ্গে বলেন, বিগত সরকারের সময় হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা রুজু করা হয়েছে তাদের তালিকা সহ দায়িত্বশীলদের কাছে বিষয়টি জানালে এসব মামলা থেকে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া তিনি আরও বলেন, এবারের দূর্গা পূজার জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও বিগত সরকারের সময় বরাদ্ধ ছিল মাত্র ২ কোটি টাকা। তাই হিন্দু বৌদ্ধ ও মুসলমান আমরা সকলে একসাথে মিলেমিশে দেশ সংস্কার করে সুন্দর সমাজ তথা দেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে হেফাজতের কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির সনদ সরকারীভাবে মূল্যায়ন করা, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ বাংলাদেশে শরিয়া কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে মজলুম জনগণের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ২০২১ সালের মোদি বিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার হটাতে শহিদ ও কারা নির্যাতিতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইসলামী ফাউন্ডেশন এর ডিজি ও ডাইরেক্টর পদে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসরদের হটিয়ে নিরপেক্ষ ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের পদায়ন করা। জুলাই’২৪ শে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ৭২ জন হাফেজ-আলেম শাহাদাত বরণকারীদের বিষয়ে সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও পূর্ণবাসন করা। ২০১৩ ও ২০২১ সালে আওয়ামী সরকার কর্তৃক সারা দেশে আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ দাবী জানিয়ে উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান করেন। দুপুর দুইটা থেকে শুরু হওয়া উক্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হাটাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা খলিল আহমেদ কাসেমী। এতে মানপত্র পাঠ করেন মাওলানা আনোয়ার শাহ আজহারী। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দীন মো.আবু আহসান, মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা মুফতি জসিম উদ্দিন, আল্লামা দিদার কাসেমী, আল্লামা সোয়েব জমিরী, মুফতি কেফাযেততুল্লাহ, নাজিরহাট মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী , হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউজ্জামান, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শোয়েব, ও হাটহাজারী মডেল থানার ওসি হাবিবুর রহমান প্রমূখ। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ধর্ম উপদেষ্ট মরহুম আল্লামা শাহ আহম্মদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীর কবর জেয়ারত করেন। পরে বিকাল চারটায় হাটহাজারী পৌরসভার পশ্চিম আলীপুরে মারকাযুত তা’লীম ওয়াত তারবিয়াহ মাদরাসায় হেফাজত নেতা মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনিরের সভাপতিত্বে অপর এক মত বিনিময় সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য রাখেন। বাদ আসর তিনি হাটহাজারী মাদরাসার পাশে হাটহাজারী কেন্দ্রিয় সীতাকালি মন্দির পরিদর্শন করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম নগরীর উদ্দেশ্যে রওনা হন ।