রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
Logo পল্লবীতে ২৪ লিটার চোলাই মদসহ পাঁচ মাদক কারবারি গ্রেফতার Logo বাইক চালাতে পারেন না তবুও সাথে হেলমেট রাখতেন শুভ্র! গ্রেফতারের পর বেরোলো রহস্য Logo সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ গ্রেফতার Logo আমরা মাঠে আছি,নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন: সেনাপ্রধান Logo ঢাকায় একদিনে ট্রাফিক আইনে ৭৪৯ মামলা,জরিমানা আদায় প্রায় ৩১ লাখ Logo দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামীকরণের সফল কারিগর সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী পতিত স্বৈরাচারকে পুনর্বাসনে ব্যস্ত Logo আনসার বিদ্রোহ:এখনো সাড়ে ৮ হাজার আনসার সদস্য সাময়িক স্থগিত অবস্থায় আছে Logo দুর্গাপূজায় ৩২ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তা দিবে ২ লক্ষাধিক আনসার Logo হারুন সম্পর্কে যা বললেন নতুন ডিবিপ্রধান

ধরা-ছোঁয়ার বাইরে দুর্নীতির বরপুত্র ডেসকোর শতকোটি টাকার মালিক প্রকৌশলী জগদীশ

এম এন আলী নাইম / ১৫৪ Time View
Update : শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৮:৪৭ অপরাহ্ন

দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সেই টাকা নিজের পকেটে নেওয়াসহ পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য এবং তার অধীন বিভিন্ন প্রজেক্টে নিজের মনোনীত ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে অভিযোগ ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী জগদীশ চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে।
তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, দুর্নীতি ও অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ফেলা এই কর্মকর্তা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের খুব আস্থাভাজন ছিলেন। সেই সুবাদে গড়েছে টাকার পাহাড়। বিদেশে টাকা পাচার, নামে-বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ কি নেই তার নামে। তবে শেষ রক্ষা হচ্ছে না, তার এসব দুর্নীতির খবর এখন পৌঁছে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের খুব আস্থাভাজন মানুষ ছিলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী প্রকৌশলী জগদীশ চন্দ্র মন্ডলকে ডেসকোর বোর্ডে নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশলী) হিসেবে নিয়োগ দেন। ডেসকো সূত্রে জানায়, তার নিয়োগেও ছিলো বড় ঘাপলা। ডেসকোতে তিনি এ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। ১৪ থেকে ১৫ বছরের মধ্যেই তিনি তরতর করে বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক বনে যান। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় যেকোন প্রকল্প উনি বেশিব্যয় দেখিয়ে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতেন এবং পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়ে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র বলছে, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে ৫০০ কিলোওয়াটের অধিক হলে গ্রাহককে লোড ছাড়পত্র নিতে হয়। তাই মাঠ পরিদর্শনকে ব্যবহার করে
জগদীশচন্দ্র মন্ডল নির্দেশনা দিয়ে ডিপোজিট কাজকে ডেভেলপমেন্ট দেখিয়ে অথবা চাহিদাকৃত লোড কমিয়ে লোড ছাড়পত্র প্রদানের শর্তে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। পাশাপাশি ডেসকোর অফিশিয়াল লেটারে নিজের স্বাক্ষরিত মোটা
অংকের প্রাক্কলন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে ঘুষ প্রদানে রাজি করেন। সম্প্রতি, ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর নাসির উদ্দিন ইউসুফ নিকট ৮০০ কিলোওয়াট লোডের জন্য লোড সংরক্ষণ ফি ও অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় জমা প্রদান বাবদ ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪শ’ ১৩ টাকা জমা প্রদানের জন্য ডেসকো হতে পত্র মারফত অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে গ্রাহকের সাথে ১ কোটি টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি পত্রের মাধ্যমে লোড কমিয়ে ৫০০ কিলোওয়াট দেখিয়ে ডেসকোর ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪শ’ ১৩ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সংযোগ প্রদান করেন। একইভাবে ডেসকোর অধীনস্থ এলাকায় ডেভেলপার কোম্পানি বিটিআই, সান্তা প্রোপাটিজ, এডভান্স ডেভেলপার নির্মিত বহুতল ভবন সমূহের লোড ছাড়পত্র প্রদান এবং টঙ্গী শিল্প এলাকার এসকেএফ ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, আকিজ বেকারী, অলটেক এলমুনিয়াম ইন্ডা, লিমিটেডের লোড ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে ডেসকোর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেসকোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিগত পাঁচ বছরে লোড ছাড়পত্রের নথি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ডেসকোর আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী জগদীশচন্দ্র মন্ডল লোপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জগদীশচন্দ্র মন্ডল বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নাম ব্যবহার করে পদোন্নতি, বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও তার আওতাধীন বিভিন্ন প্রজেক্টে তার মনোনীত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অতি সম্প্রতি সহকারী প্রকৌশলী থেকে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য তিনজন সহকারী প্রকৌশলীর থেকে সিনিয়রিটির ক্রমানুসার পিছনে ফেলে অবৈধভাবে পদোন্নতির ন্নতির জন্য প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা তথা সর্বমোট ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেন। এছাড়াও কর্মচারী পদোন্নতির ক্ষেত্রে কিছু কর্মচারীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে গ্রহণ করেছেন।
সূত্র বলছে, জগদীশচন্দ্র মন্ডল এর আওতাধীন সদ্য সমাপ্ত ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কনভার্শন লাইন প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মনাভন দত্ত-এর
সহযোগিতায় একই ট্রিনসে একাধিক ক্যাবেল ভূগর্ভস্থ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সার্কিট এর নাম করে দফায় দফায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএনএফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। এডিবির অর্থায়নে ২১০০ কোটি টাকার প্রজেক্টে প্রকল্প পরিচালক জ্যোতিষ চন্দ্র পছন্দের ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। জগদীশচন্দ্র মন্ডল আত্মসাৎকৃত অর্থ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়। এছাড়া তিনি ঢাকা আলিশান জীবন-যাপন করছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয়ে খাতওয়ারি সুষ্ঠু তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশল জগদীশ চন্দ্র মন্ডল এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিপ করেননি।
এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ পেলে যাছাই-বাছাই করা হয়। তার পরেই আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই দুর্নীতিবাজ যে হউক তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বের করতে হবে। দুর্নীতিবাজদেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। দুর্নীতি থাকলে দেশে সুশাসন থাকবে না।
এ ব্যাপারে ডেসকোর এমডি মোঃ কাউসার আমীর আলী বলেন, আমি ঘটনা সম্পর্কে অবগত নই , আমি বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো,তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category