রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং এবং অটোমেকানিক্স খাতগুলোর উপর যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় না, বরং বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার সুযোগও দেয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মানিকগঞ্জের আনসার ও ভিডিপি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কর্তৃক আয়োজিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রশিক্ষণ (প্রকল্প) শাখার অধীনে ৭০ দিন মেয়াদী কারিগরি প্রশিক্ষণ “রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং” এবং “অটোমেকানিক্স” ১ম ধাপ ভিডিপি (পুরুষ) এর প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠান তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং এবং অটোমেকানিক্স এই দুইটি প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বর্তমানে দেশে ও বিদেশে অত্যন্ত বেশি। এই খাতগুলোর উপর যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় না, বরং বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার সুযোগও দেয়। তাই কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করা, উদ্যোক্তা হওয়া এবং দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্সের সংমিশ্রণের কারণে আধুনিক গাড়িগুলোতে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবহার বাড়ছে, যা মেকানিকদের প্রযুক্তিতে আরও বেশি দক্ষ হতে বাধ্য করছে। অটোমেকানিক্স প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে অভিজ্ঞ আরএসি ও অটোমেকানিক্স কর্মীদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গরম আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং প্রযুক্তির বাজার খুবই শক্তিশালী। বিশ্বব্যাপী গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এবং রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ কর্মীর চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এছাড়া, উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ অটোমেকানিক্সের চাহিদা খুবই বেশি, কারণ নতুন প্রযুক্তি যেমন হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক গাড়ির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা তাদের এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বিদেশে তুলনামূলকভাবে বেশি অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নিজেদের উদ্যোগে দেশেও ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারেন; যেমন গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ বা রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং মেরামতের দোকান। দক্ষ আরএসি ও অটোমেকানিক্স কর্মীরা দেশের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তা করতে পারেন। নবায়নযোগ্য শক্তি বা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন, যা পরিবেশ সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রধান অতিথি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রশিক্ষণার্থীরা নিজ নিজ ট্রেডের কার্যক্রম ভালোভাবে শিখেছে এবং তারা পরবর্তীতে এই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তাদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে সফলতার চরম শিখরে পৌঁছাবে এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুনাম দেশ থেকে দেশের বাইরেও পৌঁছে দিবে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ১ম ধাপের কারিগরি প্রশিক্ষণ গত ১৬ জুলাই শুরু হয়ে ২৩সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। “রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং” এবং “অটোমেকানিক্স” এই ০২টি ট্রেডে প্রশিক্ষণে ৩২টি জেলা হতে মোট ৬৪ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং’ এবং ‘অটোমেকানিক্স’ প্রশিক্ষণে মোট ৬৪ (চৌষট্টি) জন সদস্যকে ৩২ (বত্রিশ) টি জেলা থেকে নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরস্কার সামগ্রী ও সনদপত্র বিতরণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের সমাপ্তি ঘটে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপমহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা রেঞ্জ কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম, পরিচালক (প্রকল্প-প্রশিক্ষণ) মুহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, ৩৬ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক শিরিন সুলতানা, গণসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. আশিকউজ্জামান, মানিকগঞ্জ জেলা কমান্ড্যান্ট এ. এস. এম. সাখাওয়াৎ হোসাইন এবং উপপরিচালক (সমন্বয়) নাজমুছ সালেহীন নূর। এছাড়াও ব্যাটালিয়ন ও জেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডিআই/এসকে