‘আসছে ফাগুন আমরা হব দ্বিগুণ’‘ব্লাডি জুলাই’, ‘মোরা সাঈদ,মোরা রফিক,মোরা মুগ্ধ,সময়ের আলোড়নে হব সিংহ’‘গর্জে উঠেছিলাম বলেই বিজয় এসেছিল’তুমি কে আমি কে,বিকল্প বিকল্প’আমি মেট্রোরেল হতে চেয়েছিলাম,খোদা আমাকে ছাত্র বানাল’, ‘বাংলার হিন্দু,বাংলার বৌদ্ধ,বাংলার খ্রিষ্টান’‘বাংলা আদিবাসী সুরক্ষার দায়িত্ব সবার’‘পানি লাগবে পানি’, ‘স্বাধীনতা এনেছি। সংস্কারও আনব’,এ বয়স জানে রক্ত দানের পুণ্য’,‘এ বয়স হার মানার নয়’‘চলো রাষ্ট্র সংস্কার করি’‘ভাই স্বাধীনতা লাগবে? স্বাধীনতা!’ মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’,চলো রাষ্ট্র সংস্কার করি’।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রংপুরে গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদের প্রতিকৃতি,আলোচিত নানা স্লোগান, কবিতার পঙিক্ত,গুলিবিদ্ধ ছাত্রের মর্মস্পর্শী এসব কথা এখন গ্রাফিতি হয়ে ফুটে আছে রাজধানীর দেওয়ালে দেওয়ালে। স্লোগান নয় যেন শব্দের চাবুক! রং-তুলির মধ্য দিয়ে এসব ফুটিয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা।
শনিবার রাজধানীর মিরপুর ১১ নাম্বার এলাকা ঘুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের আঁকা এসব গ্রাফিতি বা দেওয়াল চিত্র দেখা গেছে। কিছু কিছু দেওয়ালে নিজেদের পুরোনো লেখা মুছে দিয়ে নতুন গ্রাফিতি আঁকতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবেদকে বলেন,আন্দোলনের সময় আমরাই এঁকেছিলাম। এসব স্লোগান,এখন মুছে দিচ্ছি। তখন প্রতিপক্ষ কঠিন ছিল বলে আমাদের ভাষাও কঠোর ছিল। এখন আমাদের হারিয়ে শহিদ ভাইদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নতুন গ্রাফিতি আঁকছি।
তারা বলেছেন,আমরা সবাই মিলে এই আন্দোলন করেছি। সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়েছিলেন। নগরের দেওয়ালগুলোতে নানা ধরনের লেখা ছিল,যা দৃষ্টিকটু ও সমীচীন নয়। তাই এসব লেখা মুছে নতুন করে রাঙানোর কাজ করছি। তুলে ধরছি আন্দোলনের নানা স্মৃতি। যাতে পথচলতি শিশু-কিশোর থেকে বয়স্ক সবাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি ভুলে না যান,সে জন্য গ্রাফিতি আঁকছি।
এক শিক্ষার্থী বলেন,এই গ্রাফিতি অঙ্কনও দেশের জন্য কাজেরই অংশ। তাই আগের দেওয়াল লিখন মুছে আমরা পুরো দেওয়াল জুড়ে এই আন্দোলনে আমাদের গৌরবের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেওয়ালচিত্র আঁকছি। এই কাজেও অংশ নিচ্ছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য,প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের সময়কাল থেকে মূলত এই গ্রাফিতির প্রচলন শুরু হয়। গ্রাফিতির নিদর্শন এখনো আছে প্রাচীন গ্রিক শহর এফিসাস বা বর্তমান তুরস্কে। গ্রাফিতি প্রকৃতপক্ষে গুহার দেওয়ালে প্রথম অঙ্কন করা হয়েছিল পশুর হাড় দিয়ে খোদাই করে। পরে পরিবর্তন হয়ে ধীরে ধীরে মানুষের বাড়ির অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে দেওয়ালে,যেখানে মানুষের নজরে আসে এমন জায়গায় গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়।
বাংলাদেশে গ্রাফিতি নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই ছিল না কারোর। তবে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে রাজধানীর আগারগাঁও এবং মিরপুরের কয়েকটি দেওয়ালে ‘সুবোধ’-এর গ্রাফিতি বা দেওয়ালচিত্র পথচলতি মানুষের নজরে আসে। এই দেওয়ালচিত্রগুলোর একমাত্র চরিত্র ছিল ‘সুবোধ’। এর সব কটিতে লেখা ছিল—‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা,এখন সময় পক্ষে না।’তবে এখন যে কোনো আন্দোলনে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে এই গ্রাফিতি।
ডিআই/এসকে