ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনে তিন আলোচিত আসামিকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টায় জড়িত তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল গির্জায় বড়দিন উদযাপন পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,যিনি এমন কাজ করেছেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। তবে ছুটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের কাজ আমরা কখনো প্রশ্রয় দেবো না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, এভাবে চার্জশিট বা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নিয়ম নেই। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা সেটা মানেননি।
চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা মোটিভ জানতে পারলে আপনারাও জেনে যাবেন।
জানা গেছে,জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যার দুটি মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা। তবে আদালতে ওঠার আগেই বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে আবার তদন্ত করা হচ্ছে।
ঘটনাটি জানার পরই মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) রমনার পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নথিপত্র ও পুলিশ সূত্র বলছে, তদন্ত কর্মকর্তা তার ডিবির পরিচয় গোপন করে থানা-পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি আদালতে জমার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নেননি। বিষয়টি জানাজানির পর তিনি অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চলে গেছেন।
আনিসুল হক ও সালমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল সবুজ মিয়া ও মো. শাহ-জাহান মিয়া হত্যা মামলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় সবুজকে মারধর করে ও শাহ-জাহানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরের দিন নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। সবুজের চাচাতো ভাই মো. নুরনবী ও শাহ-জাহানের মা আয়শা বেগম মামলার বাদী হন।
মামলা দুটির তদন্ত করছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) রমনার পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আরিফ। তিনি গত ২৩ অক্টোবর দুই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নথিতে দেখা যায়, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নিজেকে তিনি নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক পরিচয় দিয়েছেন। যদিও তিনি কর্মরত ডিবিতে।
জানা গেছে, মামলা দুটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার চেষ্টার আগে তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ সাক্ষ্য-স্মারকলিপিতে (মেমো অব এভিডেন্স বা এমই) ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সই নেননি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিবি থেকে কোনো মামলায় অভিযোগপত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য-স্মারকলিপিতে তদন্ত-তদারক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন), উপ-পুলিশ কমিশনার এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ক্ষেত্রবিশেষ কমিশনারের সই লাগে।
ডিআই/এসকে