Sonaly Khobor

বিশেষ প্রতিবেদক:

সীমাহীন দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমোজ্জিত রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক আরজেএসসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার। একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সঙ্গে মিলেমিশে যোগসাজশ করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে চলেছিন তিনি। গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। একটি চক্রের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ-সম্পদ কামান।
দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক আরজেএসসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমারের দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়েছে। ফলে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রণজিত কুমার ও তার স্ত্রী শেলী হাওলাদারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে তাদের দুদকের পক্ষ থেকে।
সূত্র জানায়, সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থে আরজেএসসিতে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন সহকারী রেজিস্ট্রার রকিব আহমেদ রনি ও পরীক্ষক মি. নবাব। যারা প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় প্রতিটি ফাইলে অবৈধভাবে নগদ অর্থ আদায় করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এটা চলতে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সুনামহানি ঘটে চলেছে। এদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। ফলে নীরবে অর্থ-কড়ি দিয়ে কাজ সারছেন সেবাপ্রার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরজেএসসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার এখানে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। আর এ কারণে তিনি সহজেই একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তোলেন। যারা মিলেমিশে সেবাগ্রহণকারীদের একরকম জিম্মি করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। যার অকাট্য প্রমাণ দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের নির্মোহ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তথ্য। এভাবে অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি করার প্রয়াস পাচ্ছেন রণজিত কুমার।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ফলে দুুদক দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে পরিচিত আরজেএসসির ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার ও তার স্ত্রী শেলী হাওলাদারের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার ও তার স্ত্রী শেলী হাওলাদারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে কমিশনের এই কার্যালয়ে এই দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার ১ নম্বর আসামী রণজিত কুমার আর ২ নম্বর আসামী তার স্ত্রী শেলী হাওলাদার। ১ নম্বর আসামীর বিরুদ্ধে ৬২ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকে জমা দেওয়া তার সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
এদিকে ২ নম্বর আসামী রণজিত কুমারের স্ত্রী শেলী হাওলাদারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ১৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অেিযাগ আনা হয়েছে। যদিও তারা বেনামে নানা খাতে অর্থ রেখেছেন বলে অনেকে বলাবলি করেন। আর বড় একটা অংশ পাশের দেশের পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রণজিত কুমার চাকরির সুবাধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ তার স্ত্রীর নামে রেখেছেন। ফলে দুটিতে মামলাই তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭১(১) ধারা দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমারসহ তার অনুগত চক্রের মতো অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রত্যাশী থেকে। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কাজের জন্য তো সরকার তাদের বেতন-ভাতা দেয়, তাহলে তারা কেন আমাদের কাছে টাকা চায়! এটা কি মগের মুল্লুক!
আরো অভিযোগ পাওয়া গেছে, অকাট্য প্রমাণসহ ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমার ও তার স্ত্রী শেলী হাওলাদারের বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলা শুধু ধামাচাপা দিতে টাকার বস্তা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রণজিত কুমার। বাদ নেই উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যম সারির নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা। এমনকি এ সুবিধা পেতে জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু শাখা তার দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে কাজ করছে। আর মামলা থেকে রক্ষা পেতে ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া বলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তার সহকর্মীরা জানান।
এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমারের অঢেল সম্পদের চিত্র। উল্লেখিত সম্পদের বাইরে তার আরো একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও সম্পদ রয়েছে।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার রণজিত কুমারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version