পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নানা প্রান্তে প্রতিনিয়তই বেড়ে উঠছে সশস্ত্র কিশোর গ্যাং। আর তাঁরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।এরা নিজেদের মতো করে এক একটা গ্যাং গড়ে তুলছে।এই গ্যাংয়ের সদস্যদের উৎপাতে অতিষ্ঠ নানা শ্রেণীর মানুষ জন।এমনকি তাদের ভয়েএলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে মুরুব্বিরা পর্যন্ত মুখ খুলে না।আবার কেউ কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও হচ্ছেন অপমান অপদস্ত সহ হামলার শিকার।সমাজে এ যেন একটা চরম আকারে ব্যধি হয়ে গেছে।এদিকে প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে নানা মহলে চলছে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। সূত্র জানা যায়,বাউফল উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সর্বত্রই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই কিশোর গ্যাং।এদের বয়স ১৪ থেকে ১৮ বছর।এরা তথাকথিত বড়ভাইদের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।নিজেদের অধিপত্য বিস্তার করতে দেশি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে প্রায়শই।ইভটিজিং,মাদকের কারবার ও সেবন এবং চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে আছে তারা।অভিযোগ রয়েছে-এ সব কিশোর গ্যাংয়ের মদতদাতা হিসেবে রয়েছে তথাকথিত বড় ভাইদের শেল্টার সহ উসকানি।এতে বলতে গেলে অসহায়ত্ব বরণ করে নিচ্ছেন অভিভাবকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তিরা জানান,পৌরসভার ভীতরে রয়েছে সক্রিয় সংঘবদ্ধ দলের ৫/৭টি কিশোর গ্যাং,বাউফল ইউনিয়নের বিলবিলাস বাজার ও হাইস্কুলের সামনে বা পিছনে,বিলবিলাস নজির মিয়া বাড়ি সংলগ্ন স্কুলের রাস্তা গুলো,গোসিংগা পল্লীবিদ্যূৎ এলাকায়,অলিপুরা বাজারএলাকা,পূর্ব কালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন,শৌলা বাজার এলাকা,মদনপুরা সোনামদ্দিন মৃধা স্কুলের মড়ায়,নাজিরপুরের ছয়হিস্যা তাতেরকাঠী বাজার,ধান্দী বাজার,সুলতানাবাদ, দাসপাড়ার চৌমুহনী,কাঠের পুল,সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল চৌরাস্তা,পাংগাশিয়া চৌরাস্তা,কালিশুরী হাইস্কুল সংলগ্ন এবং কালিশুরী বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকায় বেপরোয়া হয়ে চলছে কিশোর গ্যাং।এতে স্কুল-মাদ্রাসায় আসতে যেতে মেয়ে শিক্ষার্থীরা চরম আকারে ইভটিজিংর স্বীকার সহ নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।এনিয়ে কেউ কথা বললে তারা তাদের উপর জোটবদ্ধভাবে হামলা চালায়।অন্যদিকে উপজেলার সকল ইউনিয়নেই কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলারও ঘটনা ঘটছে প্রায়শই।সম্প্রতি কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংশোধন করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করেছিলেন কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহম্মেদ মনির হোসেন মোল্লা।কিন্তু তাতে কি হবে,তা যেন তারা তোয়াক্কাই করছে না। চেয়ারম্যানের অগোচরে মাথা তোলা কিছু নেতারা ওইসব কিশোর গ্যাং সক্রিয় রাখতে দিচ্ছেন শেল্টার প্রতিনিয়ত।আর কালাইয়া ইউনিয়ন যেন মাদকের আতুর ঘরে পরিনত হয়েছে।চলছে দেদারসে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত মাদক ব্যবসায়ীদের উৎপাত,এতে যেন অসহায় বরন করছেন চেয়ারম্যানরা। কারণ হিসেবে জানা যায়,ওইসব মাদক ব্যবসায়ীদের কারো কারো সাথে রয়েছে প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্তাব্যক্তিদের গভীর সক্ষতা এমনটি কেউ কেউ বলে থাকেন বলে জানা যায়।তাদের থেকে এমনকি নিচ্ছেন প্রশাসনের ঐশ্রেনীর কর্তাব্যক্তিরা মাসিক মাসোয়ারা পর্যন্ত এমনটি প্রায়শই মানুষ জনের মুখে মুখে শোনা যায় বলে জানা যায়।আবার গোপনে আটক করেও মোটা অংকের টাকা খেয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন প্রায়শই তাদের তা নিয়ে মানুষ জন খোশ গল্পে মাঝে মধ্যে মেতে উঠেন বলে জানা যায়। সচেতন মহলের বাসীন্দারা বলেন,কিশোরদের এই অবক্ষয়ের জন্য দায়ী তাদের মা-বাবা। তারা এত অল্প বয়সী সন্তানদের হাতে স্মাট ফোন তুলে দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট নিয়ে ঘাটাঘাটি করে।সেখানে ফেসবুকসহ নানা পর্নো ভিডিও দেখে সময় ব্যয় করার কারণে পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।মা-বাবাদের উচিত সন্তানদের বিপথে পা বাড়ানোর আগেই যেভাবেই হোক তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।যদি শুরুর দিকে শোধরানো যায় তা হলে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।তারা আরও বলেন, বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক/শিক্ষিকারা অনেকেই আছেন অনিয়ম দুর্নীতিবাজ।তারা শ্রেণিতে পাঠদান না করে খুলে বসেছেন প্রাইভেট কোচিং। এতে আরও অদপতনের দিকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক/শিক্ষিকারাই যদি অনিয়ম দুর্নীতিবাজ হয় তাহলে তাদের শিক্ষার্থীরা কি হতে পারে তা আপনারাই জানেন।এদিকে কিশোর গ্যাং দমনে ব৬ই জুলাই-২০২৩ ইংতারিখ পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেছেন বাউফল থানা পুলিশ।কিন্তু রহস্যজনক কারনে একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ।সচেতন মহল মনে করেন এটা লোকদেখানো ছাড়া আর কিছুই না।এব্যাপারে সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকবৃন্দরা জানান,দায়সারাভাবে দুই একটা অভিযান চালিয়ে হয়ে যান পুলিশ আবার লাপাত্তা।তবে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশ প্রশাসন যদি সঠিকভাবে অভিযান চালিয়ে ওইসবদের ঠিকমতো শাস্তি দিতে পারতেন তাহলে আস্তে আস্তে অবশ্যই ওইসবদের বিলুপ্তি ঘটবে। আবার দেখা যায় নেতাদের দালালি বা সুপারিশ, তদবির আমলে নিতে! এগুলো পুলিশ প্রশাসন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেশ ও সমাজের কথা চিন্তা করে সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন,ওই অভিযানে কাউকেই আটক করা যায়নি।তবে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত শুধু কিশোর গ্যাং নয় সকল অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২শে মার্চ-২০২৩ ইং বুধবার বিকাল সারে ৪টার দিকে সিনিয়র-জুনিয়রকে কেন্দ্র করে উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকুল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মো. নাফিজ মোস্তফা আসনারী (১৫) ও মো. মারুফ হোসেন (১৫) ও সিয়াম (১৫)কে ছুরিকাঘাত করে একই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র রায়হান,সিফাত, সৈকতসহ একদল কিশোর। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য নাফিজ ও মারুফকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে ওই দিনই সন্ধ্যা সারে সাতটার দিকে তাদের দুজনেরই মৃত্যু হয়।।