বিশেষ প্রতিবেদক : সংবাদপত্রে প্রকাশ করা বিভিন্ন তথ্য রাষ্ট্র পরিচালনার কাজকে সহজ করে দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সে ক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে দায়িত্বশীল হয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করার আহ্বান জানান তিনি। সোমবার (১০ জুলাই) অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিকদের অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আরেকটি বিষয়ে জোর দেওয়া দরকার, সেটা হচ্ছে পেশাগত ট্রেনিং। আমাদের এই বিষয়টিতে আরও জোর দেওয়া দরকার বলে মনে করি। কারণ, সংবাদপত্রকে বলে সমাজের দর্পণ। এটা বাস্তবে তাই। একটা সংবাদপত্র পড়লে, দেখলেই অনেক তথ্য পাওয়া যায়।’
সংবাদপত্র থেকে নিজের তথ্যপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি তো নিয়মিত শুধু পড়িই না, এমন কিছু দেখলে ছবিটা তুলে হোয়াটসঅ্যাপে আমার অফিসে কার কাছে পাঠালে কাজ হবে, সোজা পাঠিয়ে দিই। তারপর বলি, এখানে এই জিনিসটা হচ্ছে তোমরা তাড়াতাড়ি দেখো।’
এসব তথ্য রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ সহজ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবাদপত্রগুলো থেকে সে সংবাদগুলো পাওয়া যায় এবং সেটা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অনেক সহজ হয়।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করেন। অনেকেই অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা না নিয়েই ইচ্ছেমতো সমালোচনা করেন বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি দেশের ও উন্নয়নের সমালোচনা করা উচিত। সমালোচনা করা ভালো। কিন্তু সেই সমালোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক। সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংশোধনীর সুযোগ থাকা, শুধুমাত্র বলার জন্য বলা নয়।’বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় স্বাধীনভাবে সংবাদপত্র কিছু লিখতে পারেনি বলেও তুলে ধরেন তিনি। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় সবাই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে বলেও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অনেকেই টকশো করেন। সেখানে যেহেতু সরাসরি কথা বলা যায়, তাই ইচ্ছেমতো কথা বলেন। শেষে বলেন তাদের কথা বলার স্বাধীনতা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের আবাসন ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলে এ সময়। বলেন, ‘সরকারের তৈরি করে দেওয়া ফ্ল্যাট সাংবাদিকরা এখন কিস্তিতে কেনার সুবিধা পাচ্ছেন।’
সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য কাজ করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, ‘এরইমধ্যে অনেককেই প্লট দেওয়া হয়েছে এবং অনেকে পেয়ে বিক্রিও করে দিয়েছে। কিন্তু এভাবে না দিয়ে সরকারিভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাটও তৈরি করে দিচ্ছি। প্রথমে অল্প কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর আবার কোনোটা ২৬ বছর পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করে সেটার মালিক হওয়া যায়। সেটা যদি সাংবাদিকরা চান, সেটা আমরা দিচ্ছি।’এ ছাড়া কেউ যদি গ্রামে গিয়েও বাড়ি করতে চান তাহলে সরকার সহায়তা করবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে (ঢামেক) চার হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটিকে সুন্দর, আধুনিক ও বড় হাসপাতালে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন সরকার প্রধান। গতকাল সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যালামনাই ট্রাস্ট কলেজের শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে ক্রমবর্ধমান রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তাই আমরা ঢাকা মেডিকেলকে সুন্দর, আধুনিক এবং বড় হাসপাতালে পরিণত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। কারণ এই হাসপাতাল থেকে যাতে একই সময় চার হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমরা খুব শিগগির চার হাজার শয্যার হাসপাতালে পরিণত করার কাজ শুরু করতে পারব। বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সামনের দিনগুলোতে বিকাশ লাভ করবে। তাই বাংলাদেশকেও একই গতি বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’
চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার সংখ্যা আমাদের দেশে কম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুষ্টিমেয়সংখ্যক ব্যক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণায় নিয়োজিত আছেন।’ তিনি বলেন, ‘কাজেই, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার প্রতি আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ বর্তমান যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর পর্যাপ্ত গবেষণা খুবই প্রয়োজনীয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালাতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিস্তারিত গবেষণার জন্য যে পরিমাণ তহবিলের প্রয়োজন, আমি আপনাদের তা দেব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তাবায়িত হলে তা বিপুলসংখ্যক মানুষকে আধুনিক চিকিৎসা প্রদানের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীরা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ৫০টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে। তিনি বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সারাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শিশু হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও গণস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট নির্মাণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি ধাপে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করে সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, তাঁর সরকার স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত করতে বেশ কিছু বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার চিকিৎসা-সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি সমীক্ষা চালিয়ে কিছু জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতালে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। এ সময় শেখ হাসিনা তাঁর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বেশ কয়েকটি জেলা হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের অভাবের কারণে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এছাড়া, অনেক আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তিনি চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় না থাকার মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন, এ কারণে গ্রামের লোকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সবাই (চিকিৎসকরা) ঢাকায় থাকতে চায়, তাদের কেউ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। যখন আপনাকে গ্রামে পোস্টিং দেওয়া হবে, তখন সেখানে থেকেই আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে হবে।
শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে তাঁর সরকার প্রতিটি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে গ্রামের বাসিন্দারা নগরের বাসিন্দাদের মতো সুবিধা উপভোগ করতে পারে।
ডিএমসি অ্যালামনাই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. জুলফিকার রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। -বাসস