সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

মাহিনকে চাপা দেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ভাড়া করা চালক: মেয়র তাপস

Reporter Name / ৪২ Time View
Update : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৬:১৪ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর মুগদায় স্কুলছাত্রকে চাপা দেওয়া ট্রাকটি ভাড়া করা চালক চালাচ্ছিলেন বলে সোনালী খবর প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। শুক্রবার মুগদায় নিহত কিশোর মাহিন আহমেদের জানাজা শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

মেয়র আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত চালক গাড়িটি চালাচ্ছিল না। অন্যকে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। কঠোরতম প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, সম্পৃক্ত এবং এ রকম কার্যক্রমে আরও যারা লিপ্ত, তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমরা নিহতের পরিবারের পাশে আছি। যা যা প্রয়োজন, সবই করব।’

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উত্তর মুগদার মদিনাবাগ সড়কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির চাপায় মাহিন আহমেদ গুরুতর আহত হয়। পরে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাহিন মতিঝিল আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

মতিঝিল সরকারি আইডিয়াল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহিন আহমেদ পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ভালো ছিল। ক্রিকেট, ফুটবল ও সাঁতারে এলাকার শিশু–কিশোরদের মধ্যে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিল সে। মাহিন অবশ্য এগুলোর চেয়েও ভালো করছিল সাইক্লিংয়ে। বন্ধুদের কাছে বড় সাইক্লিস্ট হওয়ার স্বপ্নের কথা বলত এই কিশোর।

অর্থাভাবে বড় ছেলেকে এসএসসির পর আর পড়াতে না পারা মা–বাবা এই মাহিনকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছিলেন। মাহিনের সঙ্গে একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে তাদের একমাত্র বোন ফাতেমা আক্তার। স্কুলপড়ুয়া এ দুই ভাই–বোনের পড়াশোনা কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার এক দুর্ঘটনায় শেষ হয়েছে দুরন্ত মাহিনকে ঘিরে পরিবারের সব স্বপ্ন ও সংগ্রাম।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উত্তর মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় নিজের বাসার কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারায় ১৩ বছরের মাহিন। তার মৃত্যুতে মুষড়ে পড়েছেন স্বজনেরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে আজ শুক্রবার বিকেলে পরিবারের কাছে মাহিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে তাকে দাফন করা হয় মুগদা কবরস্থানে। এরপর মাহিনদের উত্তর মুগদার মামা–ভাগিনা গলির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বারবার সন্তানের কথা বলে মূর্ছা যাচ্ছেন মা জ্যোৎস্না আক্তার। ছোট বোন ফাতেমা বাসার এককোণে বসে কাঁদছে। সে বলে, ভাই তাকে নিয়ে একসঙ্গে খেলতে যেত। স্কুলেও যেত একসঙ্গে। এখন কে তাকে স্কুলে নিয়ে যাবে?

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের ফটকের সামনে একটি রিকশায় নির্বাক হয়ে বসেছিলেন মাহিনের বড় ভাই মাহফুজ আহমেদ ছবি

এর আগে দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মর্গের ফটকের সামনে একটি রিকশায় নির্বাক হয়ে বসেছিলেন মাহিনের বড় ভাই মাহফুজ আহমেদ (২১)। ঠিকভাবে কথাও বলতে পারছিলেন না। একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে চুপ হয়ে গেছেন তিনি। কথা বলতে এগিয়ে গেলে বললেন, ‘আমাদের আর কিছু রইল না। গতকালও আমার ভাইটা কথা বলেছে, খেয়েছে, ঘুরেছে। আজ সে মর্গে শুয়ে আছে। কিছুতেই মানতে পারছি না।’

মাহিনের মৃত্যুর খবর শুনে মর্গের সামনে ছুটে আসে তার খেলার সঙ্গী মো. মারুফ আহমেদ। আফসোস করে সে বলে, ‘খুব ভালো সাইকেল চালাত মাহিন। সব সময় হাসিখুশি ছিল। সবাইকে মাতিয়ে রাখত। তাঁর ইচ্ছা ছিল ভালো সাইক্লিস্ট হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category