রোববার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রেস সচিব। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সহকারী প্রেস সচিব আশরোফা ইমদাদ, সুচিস্মিতা তিথি। প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা; আমাদের দায়। এতে এক ইঞ্চিও পিছপা হব না। শেখ হাসিনা যে আকাম-কুকাম করেছে, চোরতন্ত্র জারি করেছিল, গুম ও খুনের জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। হাসিনা তার বাবার খুনিদের অনুসরণ করে অনেক জায়গা থেকে ফিরিয়ে এনে বিচার করেছিল। তিনি (শেখ হাসিনা) তার বাবার খুনিদের ফিরিয়ে আনতে যেভাবে অনুসরণ করেছেন; আমরা তার দ্বিগুণ অনুসরণ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করবো।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সরকার কতটুকু আশাবাদী; এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, আমরা আশাবাদী। পৃথিবীতে কেউ কোনো খুনিকে জায়গা দিতে চায় না। হাসিনার হরর স্টোরি ভারতীয় গণমাধ্যমের অনেকে জানতই না। ইদানিং অনেকেই লেখা শুরু করেছেন। পুরো পৃথিবী যখন বিষয়টি জানবে চাপটা তৈরি হবে। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। যদি না পারি, পরে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা করবেন। এটা জাতির আকাঙ্ক্ষা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছয় সাংবাদিক হত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের অগ্রাধিকার। অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকার তদন্ত করছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, বিষয়টি সৎ তদন্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে করাবো। আগের (আওয়ামী লীগ সরকার) সরকারের তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করলে ভালো ফলাফল পাব না।
সাইবার সুরক্ষা আইনের বিষয়ে টিআইবি’র সমালোচনার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, আমরা সমালোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করি। এটা নিয়ে আসিফ নজরুল সাহেব কথা বলবেন। গুম কমিশন ভালো কাজ করছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, দুই-একটা আয়নাঘরে আপনাদের (সাংবাদিক) পরিদর্শনের ব্যবস্থা করব। সেখানে কি ভয়াবহভাবে গুম করা হত সেই চিত্র দেখতে পারবেন। হাসিনার আমলে পাপাচারের শেষ নেই। প্রেস সচিব বলেন, প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে। হাসিনাকে আমরা বিচারের আওতায় আনবো। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আমরা (সাংবাদিক) আন্দোলনে ছিলাম। এ বিষয়ে কাজ চলছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যে সময়টা নষ্ট হয়েছে তা মেকআপ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করতে কাজ করছে পিবিআই। বিষয়টি নিয়ে আজকে (রোববার) পিবিআই প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। কারণ তারা ত্রিশ বছর আগের খুনের তদন্তও সফলভাবে করেছে। তাই তাদের সক্ষমতা আছে। বিষয়টি কষ্টসাধ্য হলেও প্রচুর সময় দিচ্ছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
বিটিভি ও বাসসের স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিতে সরকার উদ্যোগ নেবে কিনা; এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আছে। এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের দাবিদার। অন্যান্য দেশে এ সংস্থাগুলোর ব্যাপ্তি বৃহৎ পরিসরে থাকে। তাই আমরা সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বড় ও ক্ষমতাশালী করার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে বিটিভি সংবাদ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। তা আরও বড় করার পরিকল্পনা সরকারের আছে। যাতে দেশের সমস্ত সংবাদ মানুষ দেখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিটিভি ও বাসসকে স্বাধীনতা দেওয়া আছে। নিজ নিজ রোল অনুযায়ী প্রেস ফ্রিডম ব্যবহার করতে পারবেন। গত পাঁচ মাসে দেশের গণমাধ্যম যতটা স্বাধীন ছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও ছিল না। আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতির চিত্র বিএসএসের সংবাদে উঠে আসবে কিনা; এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, আমরা তাদের ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করি না। আমরা আশাকরি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে প্রোগ্রামগুলো করবেন।