শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বাংলাদেশে ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ Logo মাহিনকে চাপা দেওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ভাড়া করা চালক: মেয়র তাপস Logo জামিল আর নেই। Logo পটুয়াখালীর কমলাপুর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ ছালাম মৃধা’র নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা Logo স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট এর পিএফএম সেবার স্মার্ট রুপান্তরকরণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo ই-ক্লাবের বৈশাখী আড্ডা Logo ট্রেন থেকে নামার সময় পিছলে পড়ে আনু মুহাম্মদের দুই পা ক্ষতিগ্রস্ত Logo মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণ,যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষক গ্রেফতার Logo র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম’র অভিযানে পবিত্র ঈদ-উল- ফিতর’কে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে ০৬টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের গ্রুপ প্রধান ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ গ্রেফতার-৩৩ Logo সাধারণ মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করলেন সেলিমা আহমাদ

পারমাণবিক শক্তির যুগে বাংলাদেশ

Reporter Name / ১৩৫ Time View
Update : শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন ।

১৯৬১ সালে পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সেটা বাদ দিয়েছিল। সেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘ ৬০ বছর পর বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। ?রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেছে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ক্লাবে য্ক্তু হলো বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য বিশে^র ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করল বাংলাদেশ। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউরেনিয়াম গ্রহণের পর পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত হয়েছে দেশ।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে (গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি) পরমাণু জ্বালানি গ্রহণ করে বাংলাদেশ। প্রকল্পটির রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম এ তেজস্ক্রিয় জ্বালানি হস্তান্তর করে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে তা হস্তান্তর করেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এর আগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জ্বালানি ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তা রূপপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাশিয়ার নভোসিবিরস্ক কেমিক্যাল কনসেনট্রেট প্ল্যান্টে (এনসিসিপি) এই জ্বালানি উৎপাদিত হয়, যা রোসাটমের জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তেভেলের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২শ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট চালু করার জন্য ৭৫ টন ইউরেনিয়ামের প্রয়োজন হবে। একবার জ্বালানি দেওয়ার পর ১৮ মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এরপর এক-তৃতীয়াংশ ইউরেনিয়াম অর্থাৎ ২৫ টন নিউক্লিয়ার বর্জ্য তুলে নিয়ে সেখানে নতুন ইউরেনিয়াম দিতে হবে। এরপর চলবে আরও ১৮ মাস। এভাবে ১৮ মাস পরপর আংশিক জ্বালানি পরিবর্তন করতে হবে।

রুশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটম এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি ২০২১ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য চুল্লি ২০২২ সালের অক্টোবরে বসানো হয়।

সরকার ২০০৯ সালে আরএনপিপি প্রকল্প স্থাপনের ধারণাটি হাতে নেয় এবং ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রাষ্ট্রীয় রপ্তানি ঋণসংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালে মস্কোর সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাধারণ চুক্তি (জিসি) সই করে সরকার। বাংলাদেশ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে আরএনপিপির জন্য ১১ দশমিক ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি আর্থিক চুক্তি সই করে, যা প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ অর্থ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট এবং ২০২৫ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হতে পারে।

উল্লেখ্য, পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের স্বপ্নটা শুরু হয় ১৯৬১ সালে। জমি অধিগ্রহণের কয়েক বছর পর প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। স্বাধীন দেশে আবার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গতি পায় ২০০৮ সালের পর। তখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় এলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।

২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর প্রকল্পের পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিশ্বের স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সব সনদ অর্জনের মধ্য দিয়ে রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঠামো তৈরি শেষের দিকে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল পরিণতি লাভ করেছে। আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন। অচিরেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২শ, মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ?রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তার বক্তব্যে বলেন, রাশিয়ার পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশ। সমতা ও সম্মান এই বন্ধুত্বের ভিত্তি। তিনি বলেন, রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নয় প্রকল্পের পুরো সময়কাল সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতাও করে যাবে এবং জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি, রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এর আগে শুরুতে প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন। পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তরের জন্য জ্বালানি সরবরাহের সনদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে জ্বালানি সরবরাহের একটি মডেল তুলে দেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গণভবন প্রান্তের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category